নিউজবাণিজ্য

আলুর সংকট কৃত্রিম, দাম ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়

আলুর বাজারে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এই পণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় নামানো সম্ভব, তবে তার জন্য বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে হিমাগারে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলুর বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাসহ সরকারি দপ্তর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

কিছু দিন ধরে দেশে আলুর দাম বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি কেজি আলু এখন অন্তত ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সভায় জানানো হয়, আলুর উৎপাদন কত হয়েছে, তা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সার্বিক মজুত পরিস্থিতি বলেছে যে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে আলুর বড় কোনো সংকট হবে না।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, দেশে এবার আলুর উৎপাদন নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো যে তথ্য দিচ্ছে, তা সত্য নয়। সঠিকভাবে এ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অন্য বছরগুলোয় এ সময় যে পরিমাণে আলু উদ্বৃত্ত থাকে, এবার সেই পরিমাণ নেই। আলুর উৎপাদন ও চাহিদা প্রায় সমান সমান। যেসব ব্যবসায়ী আলু সংরক্ষণ করেছেন, তাঁরা দাম বাড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, হিমাগার মালিকেরা এর আগে আলুতে লোকসান দেওয়ার কারণে এখন আর আলু কিনে সংরক্ষণ করেন না। ফলে বাজার তাঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকারকে এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তাঁর মতে, খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।

আলুর বাজার তদারকিতে সরকারের গাফিলতি আছে, উল্লেখ করে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আলুর বাজার তদারকির নামে সরকারি কর্মকর্তারা ফোন করে তথ্য নিচ্ছেন, সরাসরি বাজারে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন না। হিমাগারগুলোয় গিয়ে তদারকি না করলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

হিমাগার সমিতির সভাপতি বলেন, ‘২০১৩ সালে ১ হাজার ৩০০ টাকার আলুর বস্তা ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছিল। তখন গরুকে আলু খাওয়ায় হয়েছে। সুতরাং অতিরিক্ত লাভের আশার এখন যাঁরা আলু হিমাগার থেকে ছাড়ছেন না, তাঁরা সাবধান হন। অক্টোবর মাসে এসে আলুর দাম কমে গেলে তখন হায় হায় করলেও লাভ হবে না। এখন শতভাগ লাভ করে আলু ছাড়ছেন। এটা ঠিক হচ্ছে না।’

সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সবাই একমত, আলুর সংকট নেই, বরং একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। যারা অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। আগামীকাল থেকে ১৫টি জেলায় তদারকি বাড়ানো হবে।

সার্বিক বিবেচনায় আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে এলে তা যৌক্তিক হবে বলে মনে করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

এফবিসিসিআই পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দাম আরও বাড়বে, এ প্রত্যাশায় ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু ছাড়ছেন না। তাঁরা আলু না ছাড়লে আমরা কোল্ড স্টোরেজ মালিকেরা অক্টোবর থেকে আলু ছাড়া শুরু করব। তাঁদের ভাড়া কেটে রেখে আলুর দাম দিয়ে দেব।’ হিমাগারে আলু ধরে রাখার প্রবণতা থেকে বাজার অস্থির হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মিয়া অভিযোগ করেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ী বাজারে সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সব ব্যবসায়ী সমান নন। ভোক্তাদের পণ্য দিতে দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করবেন বলে আশা করেন তিনি।

ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, তথ্য–উপাত্ত বলেছে যে চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। আবার আলুর রপ্তানিও কমেছে। হিমাগারে যে আলু রাখা আছে, তাতে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button