জাতীয়নিউজ

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একা মায়ের যুদ্ধ

স্বামী সরফরাজ উদ্দিন চাকরিসূত্রে ঢাকায়। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যুদ্ধ করছেন মা নিলুফা আক্তার। দুই সন্তানই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। কখনো ছেলের, কখনো মেয়ের শুশ্রূষা করে চলেছেন তিনি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে একাই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে নিলুফাকে।

নিলুফার ছেলে সাফওয়ান (১০) তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে আরিশা (৫) শিশু শ্রেণির ছাত্রী। তারা পাঁচ দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। শুরু থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন নিলুফা। গতকাল শনিবার রক্ত পরীক্ষায় দুজনেরই ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসক দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন।

আজ সাফওয়ান ও আরিশাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এক শয্যায় বসে আছেন মা নিলুফা। দুজনের পাশাপাশি শয্যা হলেও এক শয্যায় থাকতে চাইছে তারা।

মা নিলুফা আক্তার বলেন, গত বুধবার দুজনের জ্বর আসে। তখনই চিকিৎসককে দেখানো হয়। জ্বরের সঙ্গে মাথা ও শরীরে ব্যথা। বাচ্চারা বলেছে, তাদের সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, এতে কিছু তো করার নেই।

সন্তানদের নিয়ে নিলুফা থাকেন নগরের হালিশহরে। তাঁদের এই দুই সন্তান। নিলুফার স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরফরাজ সপ্তাহান্তে চট্টগ্রামে আসেন। সন্তানদের জ্বর দেখে গেছেন তিনি। চাকরির কারণে থাকতে পারেননি। তাঁকে ঢাকায় ফিরে যেতে হয়েছে।

সরফরাজ উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেদিনও ছেলে-মেয়ের জ্বর ছিল। এখানে এসেও মন পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। দুশ্চিন্তায় কাটছে দিন। ছুটি না থাকায় যেতে পারছি না। ফোনে কথা হচ্ছে। এ সময় কাছে থাকতে পারলে ভালো হতো।’

সাফওয়ান ও আরিশাকে সময়মতো খাবার ও ওষুধ খাওয়ানো, গা মুছে দেওয়াসহ যাবতীয় শুশ্রূষা একহাতে মা নিলুফা সামলে নিচ্ছেন। আজ তাদের জ্বর একটু কমেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, জ্বর কমে যাওয়ার পর ষষ্ঠ ও সপ্তম দিনে রক্তে অণুচক্রিকা কমে যায়। তাই এখন থেকে মায়ের আরও দুশ্চিন্তা শুরু।

মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে আজ মোট ডেঙ্গু রোগী ছিলেন ৮৩ জন। এর মধ্যে শিশু ৩২ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২০ জন, জেনারেল হাসপাতালে ২৯ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ২৯ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রামে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। একই সময়ে মারা গেছেন রাবেয়া সুলতানা (৩৪) নামের এক নারী। চট্টগ্রামে এ বছর এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯২৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জনই শিশু।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button