না.গঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ইউনিয়নভূমি অফিসে টেবিলে টেবিলে ঘুষ
নারায়ণগঞ্জ৭১.কম : – ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। নামজারি সহ অন্যান্য সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, গোদনাইলের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার এবং উমেদার শরীফ সহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারিরা গড়ে তুলেছেন ঘুষ বাণিজ্যের এক শক্ত সিন্ডিকেট। এসিল্যান্ড অফিসারের নাম করে বীরদর্পে নেয়া হচ্ছে ঘুষের টাকা। অর্থের বিনিময়ে তুষ্ট না করে কাজ হাসিল করাটা সেখানে অসম্ভব ব্যাপার। শতাংশ প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ না দিলে নামজারি মেলেনা সেবাগ্রহিতাদের হাতে। এ যেন ঘুষ গ্রহণের অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। সম্প্রতি ঘুষের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার একটি ভিডিও এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। ফুটেজে দেখা গেছে অফিসের কলাপ্সিবল গেটে তালা সাটিয়ে অপকর্ম করছে অসাধুরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, গোদনাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা প্রাপ্তির ৮০ শতাংশ লোককে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়। ঘুষ ছাড়া এখানে সেবা পাওয়াটা দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত হারে দাবিকৃত ঘুষ না দিলে সেবা গ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা। নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চুক্তির টাকা ছাড়া কোন ফাইলই নড়ে না এখানে। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ আদায় করা যায় না। ওই ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে এমনটাও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, গোপন ভিডিওতে দেখা যায়, গোদনাইল ইউনিয়ন ভুমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার, ভূমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এবং উমেদার শরীফ নিজেদের মধ্যে ঘুষের টাকা আদান প্রদান ও ভাগ বাটোয়ারায় ব্যস্ত রয়েছেন। প্রথমে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তার কক্ষে বসে এক হাজার টাকার একটি বান্ডেল হাতে নিয়ে গুনতে শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, উপ সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ও উমেদার শরীফ। আনোয়ার হোসেন টাকা গোনা শেষে সেখান থেকে হাবিবুর রহমানকে একটি অংশ বন্টন করেন। অতঃপর হাবিবুর রহমান তা গুনে দিয়েদেন উমেদার শরীফের হাতে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোদনাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে বারংবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। উপ-সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের ফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, উমেদার শরীফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘উপ-সহকারী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান গোদনাইল থেকে বদলী হয়েছেন। আর ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। কেউ যদি এমনটা বলে থাকে তাহলে ভুল বলেছে। এমন ভিডিও হওয়ারও কোনো কারণ নেই। যদিও হয়েও থাকে, তাহলে আমাদের স্যার আনোয়ার হোসেন এই বিষয়ে বলতে পারবেন। আমি এই বিষয়ে বলতে পারি না। তবে তথ্যটি সঠিক নয়।’
এদিকে, গোদনাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে নামজারি করানো জালকুড়ির মিজান নামে এক গ্রাহক বলেন, গ্রাহকরা এখানে ঘুষ ছাড়া কাজ আদায় করতে পারে না। নামজারি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘুষ দিতে হয়। আমার কাগজপত্র সব কিছুই সঠিক ছিলো। এরপরও আমার কাছ থেকে শতাংশ প্রতি ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছে। আমি ২৭ শতাংশ জমির নামজারি করেছিলাম। আমার কাছ থেকে শুধু ঘুষ বাবদ ৮৫ হাজার টাকা নিয়েছে। তারা এসিল্যান্ডের কথা বলেও টাকা নিয়ে থাকে। শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকেই তারা ঘুষ নিয়ে থাকে। ঘুষ না দিলে কাজই হয় না। আর তাদের সাথে চুক্তি করে টাকা দিলে ঘরে বসে থাকলেও কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। মানুষ এখানে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।’
জাভেদ নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, নামজারি করার সময় আমার কাছ থেকে শতাংশ প্রতি ৪ হাজার টাকা করে নিয়েছে। উমেদার শরীফ বলেছে যে, এসিল্যান্ড অফিসার এবং গোদনাইলের ভূমি সহাকারী কর্মকর্তা আনোয়ার সহ প্রত্যেকের টেবিলে টাকা দিয়ে নামজারি করিয়ে নিতে হবে। টাকা না দিলে কাজ আদায় করা যাবে না। তাই উপায় না পেয়ে টাকা দিতে বাদ্ধ হয়েছি। কোনো গ্রাহকই টাকা ছাড়া সেবা পায় না।’
এদিকে এসিল্যান্ড অফিসারের নাম করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া বলেন, ‘এসকল বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। যদি লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করে, সেক্ষেত্রে আমাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে। তবে পত্রিকায় বক্তব্য দেয়ার জন্য আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে মানুষ তো অনেক কিছুই বলে। এখন কে কাকে আমার কথা বলেছে, তা কিভাবে জানবো। এর কোনো সত্যতা নেই।’